Saturday, 15 October 2016

খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবেন? নাকি বিএনপিতে ভাঙ্গন?

দিন যতই  যাচ্ছে ততই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক বিচারাধীন মামলার রায় ঘনিয়ে আসছে। এর মধ্যে একাধিক মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে বলে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে। আর সাজা হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। এছাড়া খালেদার অবর্তমানে বিএনপিতে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি দুর্নীতির মামলাসহ ২৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুর দিকে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে যে কোন মামলার রায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিএনপির অভিযোগ, রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। কারণ, রায়ে খালেদা জিয়ার শাস্তি হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না তিনি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল আগামী সংসদ নির্বাচনে সহজেই বিজয়ী হতে এ ষড়যন্ত্র করছে।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা অশুভ শক্তির ইঙ্গিত পাচ্ছি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিয়ে সরকার ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে। তাকে সাজা দিলে এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না। তখন কি ধরণের আন্দোলন শুরু হবে সে বিষয়ে সরকার বোধগম্য নয়। যেদিন তাকে সাজা দেয়া হবে সেদিন থেকেই সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে উঠবে। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে সরকার যে একদলীয় বাকশাল কায়েমের নীলনকশা করে যাচ্ছে, তা কখনই বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।

অন্যদিকে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান  আহমেদ আজম খান বলেন, একের পর এক মামলা সচল করে সরকার রাজনৈতিকভাবে ম্যাডামকে হয়রানি করছে। সরকার তাকে যেকোনভাবে শাস্তি দিতে চাইছে।

এদিকে খালেদা জিয়া তার মামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, মামলাগুলোর কারণে খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও তিনি চিন্তিত নন।

এদিকে খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার সাজা হলে দল যাতে না ভাঙে সেজন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বিএনপিকে। ব্যক্তি বা পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে হতে হবে আরও গণতান্ত্রিক। দলের ঐক্য আরও মজবুত করতে হবে। তাহলে খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও দল ঠিকঠাকভাবেই চলবে।

তারা বলছেন, এখন থেকে যদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হয় তাহলে খালেদা জিয়ার অবর্তমানে বিএনপিতে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। কারণ, দলে সবসময়ই কিছু সুবিধাবাদি থাকেন যারা সুযোগ খুঁজেন। খালেদা জিয়ার সাজা হলে তারা দলের নেতৃত্ব নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা করে আলাদাভাবে দল গঠন করতে পারেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার সাজা হলে যদি দলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয় তাহলে মূল বিএনপির বেশী ক্ষতি হবে না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দল ভেঙ্গেছে তবে বড় দলগুলো আগের অবস্থানেই রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ ছেলিব্রেটি ডটকে বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা হলে তার অবর্তমানে বিএনপিতে ভাঙ্গন দেখা দিলেও তেমন সমস্যা হবে না। বড় দলগুলোতে মাঝেমধ্যে এরকম হয়। কেউ দল ছেড়ে চলে যায় আবার কেউ দলে নতুন করে যোগ দেয়।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য এখনই দলকে শক্তিশালি করতে হবে। দলের নেতৃত্ব নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।